কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নসমূহ, শিল্পভিত্তিক ফেডারেশন/এ্যাসোশিয়েসনগুলির যৌথ আহ্বানে শ্রমিকদের এই জাতীয় কনভেনশন ২ রা অক্টোবর,২০২০ ,গান্ধী জয়ন্তী দিবসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। লক ডাউনের কারণে শারীরিক ভাবে জমায়েত হওয়ার সমস্যা থাকায় এই প্রথম অন লাইনে এই কনভেনশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দেশের শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষের বুনিয়াদি গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারের ওপর কেন্দ্রের মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ও বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলি যে ভয়ানক আক্রমণ নামিয়ে এনেছে, এই কনভেনশন তার তীব্র নিন্দা করছে।
প্রথমবার ক্ষমতায় থাকাকালে (২০১৪-২০১৯) বিভিন্ন বিষয়গুলিতে সংশ্লিষ্ট জনেদের সাথে আলাপ আলোচনার যে মনোভাব মোদি সরকার দেখিয়ছিল, ২০১৯ এ দ্বিতীয় বার ক্ষমতাসীন হবার পর তার কোনও তোয়াক্কা করছে না। যখন অর্থনীতির সমস্ত সূূচক জানাচ্ছে যে , চাহিদা না থাকার ফলে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক অবনমন ঘটছে, তখন সরকার কর্পোরেটদের ব্যবসার পথ আরো মসৃণ করতে(ease of doing business) একই নীতি অনুসরণ করে চলেছে যার পরিণতি হচ্ছে দারিদ্র্যের ব্যাপ্তি এবং আরও গভীর সংকটের আবর্তে তলিয়ে যাওয়া। এই অবস্থার মধ্যেও, এই সরকার শুধু মাত্র কর্পোরেট ট্যাক্স কমিয়েই থেমে থাকে নি, অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক ভাবে, সংসদে বিরোধী দলের সদস্যদের অনুপস্থিতিতে গাজোয়ারী করে তিনটি শ্রম কোড পাশ করিয়ে নিয়েছে। এই শ্রম কোডগুলি এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে যার মধ্যে দিয়ে বাস্তবে শ্রমিকদের ক্রীতদাসে পরিণত করার সমস্ত শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে; নতুন ইউনিয়ন তৈরী করাকে দুঃসাধ্য করে তোলা হয়েছে এবং শ্রমিকদের ধর্মঘটের সাংবিধানিক অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের বিশাল সংখ্যক শ্রমিক যেমন রাস্তার হকার, গৃহ সহায়িকা, মিড ডে মিল কর্মী, বিড়ি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক,রিক্সা চালক, গৃহশ্রমিকসহ দৈনিক মজুরীর দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমিকদের সমস্তরকম শ্রম আইনের সুযোগ সুবিধার আওতার বাইরে রাখা হয়েছে ।
ঠিক একই রকমভাবে, সমস্ত রকম সংসদীয় গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক রীতিনীতি ভেঙ্গে সরকার তিনটি কৃষি বিল সংসদে পাশ করিয়ে নিয়েছে এবং কৃষকের উৎপাদিত শস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আইনগত ভাবে নিশ্চিত করার কোনও ব্যবস্থা না রেখেই অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন পরিবর্তন করেছে কর্পোরেটদের সুবিধা করে দিতে। যাতে দেশী ও বিদেশি সংস্থাগুলি চুক্তি ভিত্তিক কৃষিতে, বৃহৎ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও একচেটিয়া পাইকারি বাজারের পুরো পুরি দখল নিতে পারে। যা, দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক বিশাল অশনি সংকেত। সরকার এখানেই থেমে থাকেনি। বিদ্যুৎ (সংশোধনী) বিল,২০২০ সংসদে পেশ না করেই, ১২ টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের গুরুতর আপত্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়ে বর্তমান কর্মীদের ভবিষ্যত ফ্র্যানচাইজি মালিকের দয়ার ওপরে ছেড়ে দিয়েছে। ইতিপূর্বে, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলির বিপুল পরিমান আনাদায়ী ঋণ উদ্ধার করার কোনও চেষ্টা না করে, আমানতকারীদের অর্থের বিনিময়ে সেই ক্ষতি সামলানোর ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং আমানতকারীদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে একাধিক ব্যাংকের একীকরণ (merger) করা হয়েছে। জি এস টি র ক্ষেত্রে ভ্রান্ত নীতি ও দেশের মুখ থুবড়ে পরা অর্থনীতির ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক অবস্থা আজ অত্যন্ত শোচনীয়। যার প্রভাবে রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থাও আজ গভীর সংকটে। অন্যদিকে, রিজার্ভ ব্যাংক, এল আই সি ও অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলিকে এ টি এম এর মত ব্যবহার করছে এই কেন্দ্রীয় সরকার। রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলিকে নিলামে চড়িয়ে, ১০০% এফ ডি আই এর মাধ্যমে অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে চলছে বেসরকারি করণের প্রক্রিয়া। এর মধ্যে রয়েছে রেলের রুট, রেল স্টেশন, রেলের উৎপাদন ইউনিট, বিমান বন্দর, পোর্ট এবং ডক ,লাভজনক সরকারি বিভাগ, কয়লা খনি, আর্থিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ ভারত পেট্রোলিয়ামের মত সংস্থা, ৪১ টি সমরাস্ত্র তৈরির কারখানা(অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরী), বি এস এন এল(যার ৮৬০০০ কর্মীকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হয়েছে), এয়ার ইন্ডিয়া, সড়ক পরিবহন এমন অজস্র সরকারি বিভাগ বা সংস্থা। আর এই ধ্বংসাত্মক অপকর্মগুলি অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে এমন একটা সময়ে করে ফেলার ব্যবস্থা হচ্ছে, যখন সারা দেশ কোভিড-১৯ অতিমারীর আক্রমণে বিধ্বস্ত। এমন কি যাদের আমরা কোরোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামনের সারির সৈনিক বলছি, সেই চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা কর্মী, সাফাই কর্মী, অঙ্গন ওয়াড়ী, আশাকর্মীরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করেও বাধ্য হচ্ছেন অঞ্চলে অঞ্চলে কাজ করে যেতে। অথচ তাদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না। দেওয়া হচ্ছে না প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আর্থিক সুযোগ সুবিধা বা বীমার সুবিধা। আর ধান্ধার পূঁজিপতিরা এই অতিমারী আবহের মধ্যেই তাদের বাজার প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করে খবরের শিরোনামে থাকছে।
আর এই অপরিকল্পিত লকডাউন কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের জীবনে এক দুর্বিসহ যন্ত্রণা বয়ে এনেছে। যা কিনা নোটবন্দীর দুঃসহ অভিজ্ঞতাকেও ম্লান করে দিয়েছে। এই সময়টা মহিলাদের কাছেও ছিল কষ্টকর, যারা কর্মক্ষেত্রে, ঘরের বাইরে ও ভেতরে সর্বত্র অতিরিক্ত লাঞ্জনা-গঞ্জণার শিকার হয়েছেন।
দেশের অর্থনীতি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। বেকারী ,তথ্যের হিসেবে বিশেষকরে মহিলাদের ক্ষেত্রে বেকারী অতীতের সব সংখ্যাকে ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ স্থানে আর ধারাবাহিক ভাবে জিডিপি হ্রাস পেয়ে এমন বিশাল ঋণাত্মক মানে গিয়ে পৌঁছেছে, তা অতীতে কখনও কেউ প্রত্যক্ষ করে নি।
লকডাউনের শুরুতে, কোম্পানির মালিকদের প্রতি এ্যাডভাইসারি জারি করে সরকার জানিয়েছিল - লক ডাউনের কারণে কোনও কর্মীকে যেন ছাঁটাই না করা , কারো বেতন যেন না কাটা হয় । পরবর্তীতে সরকার নিজেই তাকে গুরুত্বহীন করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে মালিকদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, সরকার তাদের বশংবদের মতো,তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
আবার, এরই মাঝে পিএমকেয়ার(PMCARE) নামে এক তহবিল গঠণ করা হয়েছে যা আগাগোড়াই অসচ্ছ্বতায় ভরা। এই তহবিলে গেছে কর্পোরেটদের বিপুল অংকের অর্থ, আর এই তহবিলে সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে বাধ্যতামূলক (যাকে বলা যায় - হাত মচকে আদায় করা) অনুদান। তাদের মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহু পুরোনো এক নির্দেশনামাকে খুঁজেপেতে বের করে সরকারি কর্মীদের অবসরের আগেই বাধ্যতামূলক অবসর চালু করার ব্যবস্থাকে কার্যকর করার উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার কোরোনা অতিমারীর এই সংকটে, তাদের সমস্ত দায়দায়িত্ব নিজেদের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে তা চাপিয়ে দিচ্ছে রাজ্যগুলির ওপর। প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলিকে উপেক্ষা করা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা যেমন সিবিআই, ইডি, এনআইএ ইত্যাদির মাধ্যমে এবং আর্থিক চাপ প্রয়োগ করে বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিশানা করা হচ্ছে। আমাদের সমাজের ধর্মনিরপেক্ষতার পরিমণ্ডলকে নষ্ট করতে, ধর্মীয় বিভাজনের ভয়ংকর খেলা চলছে। দিল্লী পুলিশ সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারী বুদ্ধিজীবীদের নাম জুড়ে দিয়ছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির দাঙ্গায় উস্কানি দেবার অভিযোগে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে। অথচ যে বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে ভয়ংকর বিদ্বেষ ছড়িয়ে বক্তৃতা করলেন, তাদের বিরুদ্ধে এফ আই আর পর্যন্ত হল না। এই অপকর্মের জন্য সারা দেশ আজ দিল্লী পুলিশের নিন্দায় মুখর। দেশের সর্বোচ্চ আদালতকেও যেভাবে প্রভাবিত করা হচ্ছে তা অতীব বিপদজনক। এই সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যেই সরকার নয়া শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছে যার মধ্যে দিয়ে শিক্ষাকে পু্রোপুরি বেসরকারীকরণ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, দেশের গরীব মানুষ বঞ্চিত হবে শিক্ষার সুযোগ থেকে।
মূল কথা হল, এই সরকার দেশের সংবিধানকেই অগ্রাহ্য করে তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করছে ।
পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নসমূহের এই জাতীয় কনভেনশন, শ্রমিক বিরোধী, কৃষক বিরোধী, দেশ বিরোধী মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের এই কাজকর্মের তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করছে। এই কনভেনশন লক্ষ্য করেছে যে, বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষ তাদের জীবন ও জীবিকার ওপর ওপর সরকারের এই জঘণ্য আক্রমণের বিরুদ্ধে, তাদের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অর্জিত অধিকার ও সুযোগ সুবিধা রক্ষায় ধারাবাহিক ভাবে লড়াই করছেন। কয়লা শ্রমিকদের ৩ দিনের ধর্মঘট, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীর শ্রমিক কর্মচারীদের ধর্মঘট, রেলওয়ে উৎপাদন সংস্থার শ্রমিকদের আন্দোলন, ভারত পেট্রোলিয়াম এর কর্মীদের ২ দিনের ধর্মঘট এবং পরিবহন , তৈলক্ষেত্র, ইস্পাত , বন্দর, সিমেন্ট, শিল্পের শ্রমিকদের ও প্রকল্প শ্রমিকদের আন্দোলন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের ও শিল্পের শ্রমিক কর্মচারীরা আন্দোলনে সামিল। উত্তর প্রদেশের বিদ্যুৎ কর্মী ও ইঞ্জিনিয়াররাও পথে নেমেছেন বৃহত্তর আন্দোলনে, যারা ইতিমধ্যে বেসরকারী করণের প্রতিবাদে ও অন্যান্য দাবিতে ধর্মঘটে পর্যন্ত অংশ নিয়েছেন।
দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে, আগামী ১২ অক্টোবর ,২০২০ থেকে, অর্ডন্যান্স কর্মীদের অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘটের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে এই কনভেনশন তাদের আন্দোলনের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করছে এবং দেশের শ্রমিকদের আহ্বান জানাচ্ছে ১২ অক্টোবর, ২০২০ এবং তারপর যতদিন না ধর্মঘটের সম্মানজনক মীমাংসা হয়, ততদিন প্রতি সপ্তাহে সমস্ত কর্মক্ষেত্রে জঙ্গি প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত করতে।
সংসদে ভোটাভুটি করতে না দিয়ে পাশ করিয়ে নেওয়া কৃষক বিরোধী এই কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনকারী কৃষকদের প্রতি এই কনভেনশন পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করছে এবং ঘোষণা করেছে যে, যৌথ ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন সর্বভারতীয় স্তর থেকে আঞ্চলিক স্তর পর্যন্ত সর্বত্র তাদের সবরকম আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জ্ঞাপনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
লকডাউন চলাকালীন নানাবিধ বাধা নিষেধের মুখে দাঁড়িয়েও ,যৌথ ট্রেড ইউনিয়নসমূহের
আহ্বানে সারাদেশের শ্রমিকশ্রেণী ও শ্রমজীবী মানুষ স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে সমস্ত কর্মসূচিতে যে বিপুল সংখ্যায় অংশ নিয়েছেন, তাদের এই কনভেনশন অভিনন্দন জানাচ্ছে । এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে এই আন্দোলনের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে তুলতে হবে। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে মোদি সরকার কর্পোরেট দের স্বার্থ রক্ষা করতে দেশের শ্রমিক-কৃষক, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের স্বার্থ বলিদান দিতে নিঃসংশয়।
সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নসমূহের ধারাবাহিক দাবীর সাথে সহমত হয়ে দেশের নামজাদা অর্থনীতিবিদরাও বার বার বলে আসছেন যে এই সময়ে সরকারের উচিৎ সাধারণ মানুষের হাতে অর্থের যোগান নিশ্চিত করা, যার ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যেমন কিছুটা বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি তা দেশের ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতিকেও পুণরুজ্জীবিত করতে সহায়ক হবে। কিন্তু বিজেপি সরকার তা করতে কিছুতেই রাজি নয়।
দেশের সরকারি গুদামগুলিতে অপর্যাপ্ত খাদ্য শস্য মজুত থাকা সত্বেও সরকার গরীব মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেবার পরিপন্থী।
এই কনভেনশন দৃঢ়তার সাথে জানাচ্ছে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সমস্ত শ্রমিকশ্রেণীর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলনকে আরও উচ্চ পর্যায়ে উঁচু মাত্রায় নিয়ে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সার্বিক অসহযোগিতা ও অমান্যতার আন্দোলনে উন্নীত করতে হবে। এর সাথে সমস্ত স্তরের শ্রমজীবী মানুষ, শ্রমিক, কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের ঐক্যকে সংহত করে এই আন্দোলনে সামিল করতে আহ্বান জানাচ্ছে এই কনভেনশন।
এই কনভেনশন দেশের শ্রমিক শ্রেণী ও শ্রমজীবী মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছে নিম্নলিখিত দাবী সমুহের ভিত্তিতে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের জন্য প্রস্তুত হতে।
১) আয়করের আওতা বহির্ভূত নেই প্রতিটি পরিবারকে জন্য প্রতি মাসে নগদ ৭৫০০ টাকা দিতে হবে।
২) প্রতিটি অভাবগ্রস্ত পরিবারের জন্য মাসে ১০ কেজি বিনামূল্যে রেশন দিতে হবে।
৩) MGNREGA প্রকল্পের পরিসর বৃদ্ধি করে গ্রামীণ এলাকায় বছরে ২০০ দিনের কাজ দিতে হবে, শহর এলাকায় কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৪) সমস্ত কৃষক-বিরোধী আইন এবং শ্রমিক-বিরোধী সকল শ্রম কোড সমুহ বাতিল করতে হবে।
৫) রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প/ক্ষেত্রসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি বেসরকারিকরণ করা বন্ধ করতে হবে এবং সরকারি উৎপাদন কেন্দ্রগুলি যেমন রেলওয়ে, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি এবং বন্দর ইত্যাদি কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না।
৬) সরকারি এবং রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রগুলির কর্মীদের চাকরির মেয়াদ শেষ হবার আগেই তাদের অবসর নিতে বাধ্য করার দানবীয় আইন বাতিল করতে হবে।
৭) সকলের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করতে হবে, এনপিএস ( National Pension Scheme) বাতিল করে পুরোনো পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ইপিএস-৯৫ ( Employees Pension Scheme-1995) কে উন্নত করতে হবে।
এই কনভেনশন প্রস্তাব করছে অক্টোবর,২০২০ র মধ্যেই সারা দেশের প্রতিটি রাজ্যে/ জেলায়/ শিল্পক্ষেত্রে/ প্রতিটি কাজের জায়গায় শারীরিক উপস্থিতির সাহায্যে অথবা যেখানে তা সম্ভব নয় সেখানে অনলাইনে সবাইকে যুক্ত করে কনভেনশন আয়োজন করার। শ্রমজীবী মানুষের ওপর সরকারের শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী এই শ্রম কোডগুলির প্রতিকূল প্রভাবের বিষয়ে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যাপক প্রচার সংগঠিত করে আগামী ২৬ নভেম্বর,২০২০ একদিনের সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘটকে সফল করে তুলতে সার্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে এই একদিনের সাধারণ ধর্মঘট হচ্ছে আগামী দিনে আরও তীব্র, আরও কঠিন দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের এক প্রস্তুতি।
এই কনভেনশন আহ্বান জানাচ্ছে , যারা কোনও অনুমোদিত ইউনিয়নে বা সংগঠণে সংঘবদ্ধ অথবা যারা কোনও সংগঠণের আওতাভুক্ত নয় বা তার বাইরে রয়েছেন, যারা সংগঠিত বা অসংগঠিত ক্ষেত্রের যেখানেই থাকুন না কেন সরকারের সবরকম জন-বিরোধী, শ্রমিক-বিরোধী, কৃষক-বিরোধী এবং দেশ-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই আন্দোলনকে সামনে রেখে আগামী ২৬ নভেম্বর,২০২০ সারা দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটকে সফল করে তুলতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেন।
আই এন টি ইউ সি (INTUC) এ আই টি ইউ সি (AITUC) এইচ এম এস (HMS)
সি আই টি ইউ (CITU) এ আই ইউ টি ইউ সি (AIUTUC) টি ইউ সি সি (TUCC)
সেওয়া(SEWA) এ আই সি সি টি ইউ ( AICCTU) এল পি এফ (LPF)
ইউ টি ইউ সি (UTUC) এবং সমস্ত শিল্পভিত্তিক ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলির পক্ষ থেকে। |