আমরা বিএসএনএল এর আটটি ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশন, বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (বিএসএনএলইইউ), ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ টেলিকম এমপ্লয়িজ বিএসএনএল (এনএফটিই বিএসএনএল), ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ বিএসএনএল ওয়ার্কার্স এফএনটিও (এনইউবিএসএনএলডব্লিউ এফএনটিও), বিএসএনএল মজদুর সংঘ (বিএসএনএল এমএস), সঞ্চার নিগম অ্যাসোসিয়েশন অব টিবিএস (এসএনএটিটিএ), বিএসএনএল অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিকম মেকানিক্স (বিএসএনএল এটিএম), টেলিকম এমপ্লয়িজ প্রোগ্রেসিভ ইউনিয়ন (টিইপিইউ) ও বিএসএনএল অফিসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএনএল ওএ) আগামী ২৬ নভেম্বর, ২০২০ এর সাধারণ ধর্মঘটে যুক্ত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ৭ দফা দাবির সঙ্গে বিএসএনএল এর ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য আমরা এই ধর্মঘটে যুক্ত হয়েছি।
বিএসএনএল এর আর্থিক পুনরুদ্ধার এখনও সুদূর স্বপ্ন, যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিষয়ে কোন আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। শুধু তাই নয়, বিএসএনএল এর ৪জি পরিষেবা চালু করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার বাধার সৃষ্টি করছেন। এটা সবাই জানেন যে বিএসএনএল এর ৫০০০০ ৪জি বিটিএস এর যন্ত্রাংশ কেনার টেন্ডার বাতিল করতে কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য করে ছিলেন। টেন্ডার বাতিল করার কারণ হিসেবে বলা হয় যে ভারতীয় নির্মাতারা এই টেন্ডারের নিয়মাবলীর জন্য অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। যদিও টেন্ডার বাতিল হওয়ার পাঁচ মাস পার হয়ে গেলেও কেন্দ্রীয় সরকার এখনও জানাতে পারলেন না কোন ভারতীয় নির্মাতা বিএসএনএল এর ৪জি পরিষেবার চালু করার জন্য উপযুক্ত।
অন্য দিকে ডিওটি নিযুক্ত কমিটি বারবার নির্দেশ দিচ্ছে যে বিএসএনএল এর ৪জি পরিষেবা "সিস্টেম ইন্টিগ্রেটর' এর মাধ্যমে চালু করা উচিত। সিস্টেম ইন্টিগ্রেটর এর কাজ হলো ৪জি পরিষেবা প্রদান করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও সফ্টওয়্যার যোগার করে সেগুলো একত্রিত করা। সেইজন্য বিশেষজ্ঞদের মতে সিস্টেম ইন্টিগ্রেটর এর মাধ্যমে চালু পরিষেবা ব্যয় বহুল ও প্রযুক্তিগত ভাবে নিম্নমানের। সেই কারণে যে সকল বেসরকারি কোম্পানি ৪জি পরিষেবা চালু করেছে তারা একটি কোম্পানির সাথে নেটওয়ার্ক প্রতিস্থাপন ও তা রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য চুক্তি করে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভারতীয় নির্মাতাদের ৪জি পরিষেবা চালু করার বিষয়টি এখনও পরীক্ষিত নয়। যখন বেসরকারি কোম্পানিগুলি আন্তর্জাতিক নির্মাতাদের কাছ থেকে বিশ্বমানের যন্ত্রাংশ এর সাহায্যে ৪জি পরিষেবা প্রদান করছে, তখন এটা কোটি টাকার প্রশ্ন কেন কেন্দ্রীয় সরকার বিএসএনএল কে ৪জি পরিষেবা চালু করার জন্য ভারতীয় নির্মাতাদের অপরীক্ষিত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে বাধ্য করছেন। এটি বিএসএনএল কে কেবল অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি ফেলবে তাই নয় এই সংস্থাটির ডানা বেঁধে ফেলার জন্য একটি চক্রান্ত।
বেসরকারি কোম্পানি এয়ারটেল ও ভোডাফোন-আইডিয়া, তাদের ৪জি পরিষেবা ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও রিলায়েন্স জিও এর প্রতিযোগিতায় প্রতি মাসে লক্ষ গ্রাহক হারাচ্ছে। সেখানে বিএসএনএল ২জি ও ৩জি পরিষেবা প্রদান করেই জুলাই মাসে ৩.৮৮ লক্ষ নতুন গ্রাহক সংগ্রহ করে। এর থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে মুকেশ আম্বানির টেলিকম ক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার এর বিরুদ্ধে বিএসএনএল প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। ঠিক এই কারণে বিএসএনএল এর ৪জি পরিষেবা চালু করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেই জন্য আমরা দাবি করছি অবিলম্বে বিএসএনএল এর ৪জি পরিষেবা চালু করার ক্ষেত্রে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে সরাতে হবে। আমরা আরও দাবি জানাচ্ছি, বিএসএনএল কে বেসরকারি কোম্পানিগুলির মতো যন্ত্রাংশ কেনার ক্ষেত্রে সমান সুবিধা প্রদান করতে হবে। এছাড়াও আমাদের ১০ দফা দাবি সনদের বাকি দাবিগুলোর সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।
কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারিকরণ করার নীতির একটি অংশ বিএসএনএল কে বেসরকারিকরণ করার চক্রান্ত এ সমন্ধে কোনো দ্বিধা নেই। কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুততার সাথে রেলওয়ে, প্রতিরক্ষা, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি, বিপিসিএল, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, এলআইসি, কয়লা খনি ইত্যাদি বেসরকারিকরণ করার চেষ্টা করছেন। আমরা বিএসএনএল এর আটটি ট্রেড ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারিকরণ করার প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করছি। আমরাও কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নসমূহের সাত দফা দাবি আদায়ের জন্য যুক্ত আছি, এই দাবিগুলোর মধ্যে আয়কর দেন না এমন পরিবারগুলিকে প্রতি মাসে ৭৫০০ টাকা প্রদান, মালিক অনুসারী ও কর্মচারী বিরোধী লেবার কোড প্রত্যাহার, কর্পোরেট অনুসারী কৃষি বিল বাতিল, কেন্দ্রীয় সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় অবসরের বয়সের আগে কর্মীদের অবসর গ্রহণের অধ্যাদেশ বাতিল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
আমরা বিএসএনএল এর আটটি ট্রেড ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশন বিএসএনএল এর সকল স্তরের কর্মচারীদের কাছে আগামী ২৬ নভেম্বর,২০২০ এর সাধারণ ধর্মঘট সফল করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। আমরা সাধারণ জনগণ ও সমস্ত প্রকার সংবাদ মাধ্যমের কাছে আমাদের যুক্তিপূর্ণ সংগ্রামে সহযোগিতা করার আবেদন করছি।
বিএসএনএল এর দাবি সনদ
১) অবিলম্বে বিএসএনএল এর ৪জি পরিষেবা চালু করতে হবে। বেসরকারি কোম্পানিগুলির সঙ্গে যন্ত্রাংশ কেনার ব্যাপারে কোনো পক্ষপাতিত্ব করা চলবে না।
২) তৃতীয় বেতন চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে।
৩) কাজের আউটসোর্সিং এর নামে ঠিকানা কর্মচারীদের ছাঁটাই করা চলবে না। ছাঁটাই হওয়া কর্মচারীদের অবিলম্বে নিয়োগ করতে হবে। ঠিকা কর্মচারীদের বকেয়া বেতন প্রদান করতে হবে।
৪) ০১/০১/২০১৭ পেনশন সংশোধন করতে হবে।
৫) নন-এক্সিকিউটিভ কর্মচারীদের জন্য নতুন পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৬) অবিলম্বে জেটিও, জেএও, জেই ও টিটি পদে উন্নীত করার জন্য এলআইসিই নিতে হবে।
৭) কোভিড১৯ এর আক্রমণে মৃত কর্মচারীদের ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণের বন্দোবস্ত করতে হবে। নিখরচায় হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৮) নন-এক্সিকিউটিভ কর্মচারীদের জন্য গ্রুপ টার্ম ইনসিওরেন্স এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৯) বিএসএনএল এ নিযুক্ত কর্মচারীদের ৩০ শতাংশ অবসরকালীন সুবিধা প্রদান করতে হবে।
১০) ক্যাজুয়াল কর্মচারীদের বেতন সংশোধন করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির দাবি সনদ
১) আয়কর দেন না এমন পরিবারগুলিকে প্রতি মাসে ৭৫০০ টাকা প্রদান।
২) প্রতিটি দুস্থ পরিবারকে মাথা পিছু প্রতি মাসে ১০ কেজি করে খাদ্য শষ্য দিতে হবে।
৩) এমজিএনরেগা এর কাজের দিন বাড়িয়ে ২০০ দিন, এই প্রকল্পের মজুরি বৃদ্ধি এবং শহর এলাকায় এই প্রকল্পের কাজের পরিধি বাড়াতে হবে।
8) সমস্ত কৃষক বিরোধী আইন ও শ্রমিক বিরোধী লেবার কোড বাতিল করতে হবে।
৫) আর্থিক প্রতিষ্ঠান সহ সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ, কেন্দ্রীয় সরকার অধিকৃত নির্মাণ ও পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি যেমন রেলওয়ে, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি, পোর্ট ইত্যাদি সংস্থাকে বেসরকারিকরণ বন্ধ করতে হবে।
৬) কেন্দ্রীয় সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় অবসরের বয়স হওয়ার আগেই অবসরের দানবীয় নিয়ম বাতিল করতে হবে।
৭) সকলের জন্য পেনশন এর ব্যবস্থা, এনপিএস বাতিল ও ইপিএস ৯৫ কে উন্নত করে পুরোনো পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। |